মানব প্রকৃতির স্বরূপ অন্বেষণ।
মানব প্রকৃতির স্বরূপ অন্বেষণ।
মানব প্রকৃতির স্বরূপ অন্বেষণ করা সহজ কোনো কাজ নয়। কিন্তু মানুষের একটি সামগ্রিক প্রকৃতি তো রয়েছে। এটাকে মানুষের গঠন এবং আকৃতিগত সামঞ্জস্যের তত্ত্বের তুলনার গড়বড় হিসাবে এনে অতি প্রাকৃতিক একটি মাত্র ভুল বললে চলবে না। কিংবা প্রাণিজগতের মত লিঙ্গ ভিত্তিক বিচারে কোন ব্যাবস্থার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরাজিত একটি মধ্যম বা টলারেন্ট ব্যবস্থাপনা ধরে নেয়াও যাবে না।কারন মানব প্রকৃতি টলারেন্ট নয়।
কারণ হচ্ছে আসলে তো আমরা সবাই প্রকৃতি থেকেই উঠে এসেছি-- অন্যান্য প্রাণী জগতের মতই প্রকৃতির সাথে আমাদেরও একটি নিবিড় সম্পর্ক অবশ্যই থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে মানুষ তার সমস্ত শক্তি সামর্থ্য নিয়ে একটি টালমাটাল পর্যায়ে নিজেরাও সামলে নিয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে এবং বিশেষ শ্রেণীর মর্যাদা দখল করে নেবে, আর ফলাফল হয়ে যাবে অনিবার্য এ অন্তর্গত দখল অন্যদেরকে শুধু শুধুই তার খেসারত দিতে বাধ্য করবে। সুতরাং প্রাকৃতিক নির্বাচন সত্য হলেও এর ইতিহাস বিতর্কিত।
মানব প্রকৃতি বিষয়ক এই যে বিশেষ অধ্যায় এর সূচনা হয়েছে তখন থেকে, বিশেষত এভাবেই যখন থেকে বুদ্ধি ভিত্তিক প্রাণী হিসেবে মানুষ নিজেকে নিজের অবস্থানে চিহ্নিত করা শুরু করল। আইডেন্টিফিকেশন প্রসেস হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ন একটি অধ্যায় উত্তরনের বিচারে। মানুষের মস্তিস্কের মধ্যে যে পরিবর্তনের সূচনা সেটা এখান থেকেই প্রথম শুরু হয়েছে।
বুদ্ধির বিভিন্ন শাখা প্রশাখার ধারণার বিকাশ ও এসবের বিকাশের সাথে সাথে মানুষের নিজস্ব প্রকৃতির সম্বন্ধে চিন্তার বিষয়টিও একই সমান্তরালে তখন থেকেই সমান ভাবে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। কারণ হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কের একটি বিশাল অংশই অবহেলিত থেকে যায় অপব্যবহারে এবং শুধুমাত্র এর প্রকৃতিক ব্যবহার টুকু করার সামর্থ্য অর্জন করলেই না পরে মস্তিষ্ক ও এর সামর্থ্য সম্পর্কিত একটি পূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারি আমরা। সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এর অবদান গুলিও অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। মনুষ্যত্বের পর্যালোচনা ঠিক কখন থেকে অবধারিত রূপে বুদ্ধিবৃত্তিতে প্রাধান্য পেল সেটাতো বিতর্কের বিষয়।
কিন্তু জীবজগতের সাথে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে অতীত থেকে মানব প্রকৃতিকে সেই একই ধরনের ঘটনার পূর্বাপর সম্পর্ক যুক্ত যে গল্পগুলি আছে-- ঘটনায় ধারাবাহিক বর্ণনায় সমৃদ্ধ হয়েছে। বিদ্ধৃত করার প্রাচীন সেই পদ্ধতিকে, অর্থাৎ কোন পাহাড়ী দানবীয় উপস্থিতির উদ্ধৃতি দিয়ে রূপায়ন এবং অতঃপর সত্য ঘটনার মত বর্ণিত সেসব প্রাচীন ধারা এখনও বজায় রেখে এখনকার এই যুগের মানুষের সার্বিক অসহায়ত্বকে মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না আর। আমাদের বিশ্বের রূপকথার মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি অংশেই এ ধরনের একটি না একটি দানবের উপস্থিতি রয়েছে বলে আমরা জানি এখন। কিন্তু মানুষ এখন জুজুবুড়িকে ভয় পায় না।
জীবজগৎ যেমন প্রকৃতির উপরে পুরোপুরি নির্ভরশীল-- এযুগের আধুনিক মানুষ এখন অতীতের মত ঠিক তেমনটা আর নাই বরং মানুষ প্রকৃতির উপরে অনেকখানি নিজস্ব প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে, ইতিমধ্যেই। এবং এভাবেই সে প্রকৃতিকে নিজ উদ্দেশ্যের হাতিয়ার হিসেবে পরিবর্তিত করে নিয়ে ব্যবহার করতে শুরু করেছে বহুদিন।
অতীতের মানুষ কে তাদের সার্বিক অসহায়ত্ব নিরীক্ষণ করে পরবর্তী যুগের চিন্তাশীল মানুষেরা তখনকার আসল প্রকৃতিকে অনুমান এবং বিচার করে নিত। এর আলোকপাত করতে যে বর্ননার আশ্রয় নেয়া হয়েছে এর মধ্যে কোনটি ছিল আসল আর কোনটি ছিল নকল এবং বানোয়াট। এটা জানা গেছে অনেক পরবর্তিতে তখন যখন থেকে মধ্যযুগের সময়কার তাত্ত্বিক ভাষা এবং সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটেছিল। ভাষার মধ্যের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সমন্বয় সংযোজনে এসব ভাষাতাত্বিক ও বৈয়াকরনিকদের মধ্যবর্তিতার সুস্পস্ট প্রমান আছে। শুধু কাহিনীভিত্তিক বাদে অন্যান্য ভাষা ও দর্শনের সূচনার সময় ছিলো সেটা।
মধ্যযুগীয় অবস্থার দর্শনের পর তখনই মানব জাতির একটি অংশ ব্যক্তির এইসব অসহায়ত্ব থেকে উত্তরণ হওয়ার পরে ধীরে ধীরে নানান গোষ্ঠীগত সমস্যা পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছে ও মানুষের অসহায়ত্ব দর্শন করেছে। এসব থেকে উত্তরন লাভের জন্য মানুষ পরে অনেক যুদ্ধও করেছে এবং তা সত্ত্বেও প্রকৃতির কাছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ,গোষ্ঠীর বিশাল বিশাল অনেক পরাজয় ঘটেছে, এবং বারে বারে।
এরপর এসব ঘটনাবহুল তথ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে মানুষের অসহায়ত্বকে আবারো নতুন করে ব্যাখ্যা করা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার বিজ্ঞান সরাসরি অস্তিত্ব করলো--মানবজাতির সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করল এবং মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রে এখানে আসার ফলে বিভিন্ন মানব সমাজে বিশাল এক একটি পরিবর্তন সূচিত হয়ে গেল। এটা ছিল মানব সমাজের হতাশা জনক অধ্যায় এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি কালো ইতিহাস। এই যে পরিবর্তন এটা অনেক পুরাতন মানব গোষ্ঠীর ভিত্তিমূল পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জাতীয়তা ততদিনে দানা বেঁধে ওঠেনি। ধর্মভিত্তিতে সৃষ্টি মানব জাতির দ্বিধা বিভক্ত হতে আর কোন বাধা থাকলো না। কেউ সৃষ্টিতত্ত্বের উপর নুতন করে বিশ্বাস স্থাপন করলো তো আবার কেউ কেউ আবার সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে নিজের কোন সম্পর্কই খুঁজে পেল না। কিন্তু এর ফলাফলটি কি হয়েছে?
পুরা মানবজাতি কি এখন নিজের প্রকৃতি সম্বন্ধে কিছুটা হলেও সচেতন হয়ে গেছে? নাকি শুধুমাত্র দ্বিধা বিভক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই এর সর্বশেষ অবস্থা আমাদেরকে এযাবৎ পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে!
সর্বশেষ আধুনিক যুগের সামর্থ্য বিবেচনায় জাতীয়তার উত্থানের সাথে সাথে অন্য জাতির সঙ্গে তাৎক্ষণিক যে ভিন্নতাগুলি তৈরি হল তাকেই একটি আদর্শ সূত্র ধরে নেওয়ার মাধ্যমে মানুষের নিজেদের সামন্তবাদী পুরাতন ধ্যান ধারনা এবং একারণে সমাজের মধ্যে যেসব নিরাপত্তার সমস্যা তৈরি হয়েছে সেসব কিছুই অনেক ক্ষেত্রে এটা আবার মানবজাতির অসহায়ত্বের উপর একরকম একটি বিশাল এবং প্রবল আকারের চাপ হিসেবে বিদ্যমান থেকে বহুকাল। ইতিহাসের স্পষ্ট সত্যতায় আমরা এটা এখন সাক্ষী দিতে পারি। যে সকল ভিন্নমত গুলি এভাবে তৈরি হলো তার মাধ্যমে নানা পথ তৈরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু সব কিছুর মূলেই রয়ে গেছে এখনো এক একটি বিশাল মতদ্বৈততা। আর এ কারণে মানব প্রকৃতির স্বরূপ খোঁজার আশা যেন বর্তমান যুগে একেবারেই তিরোহিত হওয়ার পথেই পা বাড়িয়েছে।
নিকট অতীতের এতসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তার তুলনায় যেন ঠিক এখন তার বিপরীতটা ঘটে চলছে। কারণ মানব প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের সকলেরই কিন্তু এখন একটি সুনির্দিষ্ট মনোভাব তৈরি হয়ে গেছে।
কিন্তু এই মনোভাবটা ভাষায় বর্ণনা করার কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এই মনোভাব টাকে বিজ্ঞানের ভাষায় একটি prototype মনোভাব বলা চলে অথচ এর অস্তিত্ব অত্যন্ত সত্য।
কারণ আধুনিক বিজ্ঞান যতই প্রাগ্রসর হোক না কেন আমাদের ভাষা যেন এর সাথে ঠিক ততটা তাল মিলাতে পারছে না এখনো। শক্তির মদমত্বতায় টাল মাটাল জাতিগুলি তাই নানা ধরনের শক্তি সামর্থের পরীক্ষা দিয়েই চলছে দীর্ঘদিন যাবত,কিন্তু ভাষাগত দিক থেকে যেন ঠিক ততটাই তারা দুর্বল তাই কার্যকারণের অস্পষ্ট।
তাই এখন মানবজাতির শুধুমাত্র শক্তি সামর্থের উপর ভিত্তি করে মানুষের সম্পূর্ন প্রকৃতিকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন